ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও শুরু হয়েছে নির্বিচার গণহত্যা। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো, এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে অসহায় শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫০০-এর বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
গাজার শিশুদের ওপর ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। আহত শিশুর সংখ্যা ৩৪ হাজারেরও বেশি।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে অল্প কিছুদিনের জন্য যুদ্ধবিরতি চললেও ১৮ মার্চ ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করে। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসালের বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে ১,৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫০০ জনই শিশু।
নবজাতক থেকে কিশোর—কেউ রেহাই পাচ্ছে না
গত শনিবার উত্তর গাজার তুফা, মধ্য গাজার বেইত লাহিয়া এবং দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একটি নবজাতকও রয়েছে। বেইত লাহিয়ার একটি শিশুর শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একটি হাত, কয়েক ঘণ্টা যন্ত্রণা ভোগ করার পর তার মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিএইচআর-এর মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানিয়েছেন, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় ২২৪টি বিমান হামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি হামলায় নিহতরা সবাই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু কেন শিশু ও নারীরা?
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন আল-হক এবং জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি ইসরায়েলের হামলার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ইসরায়েল সচেতনভাবে নারী ও শিশুদের টার্গেট করছে। আধুনিক ইতিহাসে এত বড় আকারে শিশু ও নারী হত্যার নজির নেই।
গাজার মানুষকে কেন আবদ্ধ করা হচ্ছে?
ইসরায়েলের হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির সময় কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে ফিরলেও ১৮ মার্চের পর আবার তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে ৪ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা থেকে মানুষকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাকি অংশে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, যেখানে পানি, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাব চলছে।
রাফা অবরুদ্ধ: ইসরায়েলের নতুন কৌশল
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, এটি হামাসকে দুর্বল করার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি গাজাকে দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা।
ত্রাণ বন্ধ: মানবিক সংকট চরমে
২ এপ্রিল থেকে ইসরায়েল গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ৯০% পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। ৩৮টি হাসপাতালের মধ্যে ৩৪টিই অকার্যকর।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “গাজা এখন একটি মৃত্যুক্ষেত্র।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা: কেন?
ইসরায়েলের এই নৃশংসতা সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলো নীরব। জাতিসংঘের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফিলিস্তিনিরা প্রশ্ন করছেন—শিশু হত্যা কখন যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে?
কী করা উচিত?
১. অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি জরুরি।
২. মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক।
৩. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার শুরু করা হোক।
গাজার শিশুদের রক্ষায় সারা বিশ্বের বিবেকের কাছে প্রশ্ন—কত প্রাণ আর হারাতে হবে?
আরও পড়ুন: ৬ দিনে ২৩ জনের হাতে ধর্ষণের শিকার তরুণী, প্রধানমন্ত্রী মোদীর কঠোর হস্তক্ষেপ
মন্তব্য করুন: আপনি কী মনে করেন গাজায় এই সংকটের সমাধান কী? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কী করা উচিত? নিচে আপনার মতামত জানান।
#গাজা #ফিলিস্তিন #ইসরায়েল #মানবাধিকার #শিশুহত্যা #যুদ্ধবিরতি #জাতিসংঘ