ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবস্থিত তার্কিশ-প্যালেস্টাইন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং এর সংলগ্ন একটি মেডিকেল বিদ্যালয় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই হাসপাতালটি গাজায় ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। গতকাল শুক্রবার সংঘটিত এই হামলার ফলে গাজায় ক্যানসার চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গাজার উপত্যকায় আরও এলাকা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস যদি বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তবে ইসরায়েল গাজার কিছু অংশ স্থায়ীভাবে দখল করে নেবে। এই হুমকির মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, হাসপাতাল এলাকায় হামাসের সদস্যরা অবস্থান করছিলেন, যা তাদের হামলার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আল-জাজিরা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতজারিম করিডর সম্প্রসারণ এবং একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতাল ধ্বংসের ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
গাজার এই হাসপাতালটি এক সময় ক্যানসার রোগীদের জন্য আশার আলো ছিল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হাসপাতালটি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল না এবং সেখানে হামাসের সদস্যরা কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। হামলায় প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের স্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় জিম্মি হিসেবে থাকা ৫৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৪ জন এখনও বেঁচে আছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত জানুয়ারিতে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে গাজায় বোমা হামলা শুরু করে এবং স্থল অভিযান চালায়। এই হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা যুদ্ধবিরতিকে কার্যত ভেস্তে দিয়েছে।
ইসরায়েল কাৎজ আরও উল্লেখ করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।
এই ঘটনায় গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্যানসার হাসপাতাল ধ্বংসের ফলে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন প্রশ্ন, এই সংঘাত কবে শেষ হবে এবং গাজাবাসীর ভবিষ্যৎ কী হবে?
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ পূণর্বাসনে হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে যা হয়েছিল