ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। টানা ১৫ দিন ধরে সেখানে কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো যাচ্ছে না, যা স্থানীয় জনগণের জন্য জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২ মার্চের পর থেকে গাজায় কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা প্রবেশ করেনি। ডব্লিউএফপি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক পোস্টে জানিয়েছে, গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকায় মানবিক সহায়তা ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এই অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে, যা স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী করে দিয়েছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, কিছু প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি গাজাবাসীর জন্য এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়াও, গাজায় চলমান সংঘাতে প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতি গাজাবাসীর জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। গত জানুয়ারিতে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ১ মার্চ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা অব্যাহত থাকলেও এখনও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় অবরোধ তুলে নিয়ে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই সংকট কবে সমাধান হবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। গাজাবাসীর জীবনযাত্রা ক্রমাগত অবনতির দিকে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এই সংকটের সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। গাজাবাসীর মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।