গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০ জনে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ হামলায় কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান মোহাম্মেদ জাকুত এএফপিকে বলেন, “আমরা ৩৩০ জনের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছি। এদের বেশিরভাগই নিরীহ নারী ও শিশু। হামলায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন।”
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস ও রাফা এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে এবং প্রয়োজনমতো এ অভিযান অব্যাহত রাখবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা এই হামলার অন্যতম কারণ।
গত জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং গাজায় আটকে থাকা ৫৯ জন জিম্মির ভাগ্য অনিশ্চিত করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েল হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের পটভূমি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। ত্রাণ সরবরাহেও বাধার সৃষ্টি করছে ইসরায়েল, যা মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা
ইসরায়েলের এই হামলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এ হামলাকে “অমানবিক” আখ্যা দিয়ে যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানালেও মানবিক সহায়তা জোরদারের কথা বলেছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের সমাধান খুঁজতে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে। তবে এখনও কোনো স্থায়ী সমাধান মেলেনি। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলি বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে গাজা থেকে প্রত্যাহার করা না হলে তারা কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না।
গাজাবাসীর দুর্ভোগ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন অনেকে।
এ পরিস্থিতিতে গাজাবাসীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। তারা চান, যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনা হোক এবং মানবিক সহায়তা জোরদার করা হোক।
আরও পড়ুন: গৃহবধুকে ধর্ষণ ও ভিডিও | কাউকে জানালে হত্যার হুমকি