বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বৈঠকে উভয় পক্ষই সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই আলোচনা কি দুদেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে পারবে?
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ: বাংলাদেশের দাবি, ভারতের নীরবতা
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ড. ইউনূস জানান, “ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”
তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি শুধু বলেন, “এই বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ নথিভুক্ত হয়েছে।” ভারতের এই নীরবতা অনেক বিশ্লেষককে প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে: দিল্লি কি ঢাকার এই দাবিকে আমলে নিচ্ছে? নাকি রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে যাবে?
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নরেন্দ্র মোদি “অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন, যা অনেকের মতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ইঙ্গিতবাহী।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই অভিযোগগুলোকে “অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন” আখ্যায়িত করে বলেন, “সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।” তিনি ভারতকে সাংবাদিক পাঠিয়ে স্বচক্ষে পরিস্থিতি যাচাই করারও আহ্বান জানান।
তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি ও সীমান্ত নিরাপত্তা
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের দাবি তোলা হয়। এছাড়াও, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, “সীমান্তে সহিংসতা কমাতে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে তিস্তা চুক্তিতে চীনের সম্পৃক্ততা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ছিল কি না, তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক: উত্তপ্ত না শীতল?
জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে চাপ তৈরি হয়েছিল। এই বৈঠককে অনেকেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশে “নির্দিষ্ট কোনো দলকে সমর্থন করে না” বলে দাবি করলেও, শেখ হাসিনার বিষয়ে তাদের নীতিই বা কী—তা এখনও অস্পষ্ট।
সামনের দিনগুলো কী নিয়ে আসবে?
এই বৈঠক দুদেশের মধ্যে সংলাপের একটি সূচনা মাত্র। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো:
- শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া হবে কি?
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তি কতটা সত্য?
- তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি কি নবায়ন হবে?
- সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কি কমবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই নির্ধারণ করবে, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয়।
মন্তব্য করুন: আপনার মনে হয়, এই বৈঠক কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে? নিচে কমেন্টে জানান!
আরও পড়ুন: গাজা থেকে ইসরাইলে রকেট হামলা: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়