দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রসারে গণতন্ত্রের ভিত্তি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সতর্ক করেছেন যে, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থার বিস্তার রোধ করা না গেলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থিদের কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা না হলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে। এজন্য গণহত্যাকারীদের বিচার এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠন অপরিহার্য। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, নির্বাচন না হওয়ার কারণে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো ক্ষমতায় টিকে গেছে। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়াই একমাত্র সমাধান।
তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে নিজেদের গৌণ স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং তাদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে কোনো উন্নয়ন বা স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি গত দেড় দশকের শাসনব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে বলেন, এই সময়ে শুধু দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি ও অর্থনীতি ধ্বংস হয়নি, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমাজে ঘৃণা ও বিভাজনের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে নষ্ট করেছে। তার মতে, একটি রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হলে সমাজব্যবস্থা ভঙ্গুর ও অমানবিক হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে উগ্রবাদ ও চরমপন্থার বিস্তার ঘটে, যা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
তারেক রহমান আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের নিরাপত্তাহীন রেখে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব? তিনি সরকার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন জরুরি। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠন বা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নারীদের নিরাপত্তা সংকটকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
তারেক রহমানের এই বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তিনি ধর্মীয় উগ্রবাদ, সামাজিক অবক্ষয় এবং নারী নির্যাতনের মতো ইস্যুগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।