ঢাকার বনশ্রীতে সাত বছরের একটি শিশুর ওপর নির্মম ধর্ষণের মামলায় গৃহশিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় আদালতের এই রায় ন্যায়বিচারের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিচারক মোছাম্মৎ রোকশানা বেগম হেপীর নেতৃত্বে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এই রায় ঘোষণা করে। এ ছাড়া আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম বরগুনা জেলার পরীখাল গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং সমাজের জন্য একটি বড় ধরনের প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেছে। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, “এই রায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য কোনো রকম ছাড় দেওয়া উচিত নয়। প্রতিটি ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করতে সাহস না পায়।”
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মন্তব্যগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে এবং আমরা আশা করি উচ্চ আদালত এই রায় পুনর্বিবেচনা করবে।”
মামলার বিস্তারিত বিবরণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গৃহশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম শিশুটির বাড়িতে পড়াতে আসেন। সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিশুটির মা-বাবা বাড়ির গ্যারেজে কাজ করছিলেন। এমন সময় তারা জাহিদুলকে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনে তারা ঘরে গিয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে পারেন। শিশুটি তার মা-বাবাকে জানায় যে তার শিক্ষক তাকে ধর্ষণ করেছে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
২০২১ সালের ২৪ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোসা. রাশিদা জাহান রুনা তালুকদার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি আদালত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এই মামলার রায় সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এই রায়ের মাধ্যমে আশা করা যায় যে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা যাবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২