ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় এক ধর্ষণ মামলা মীমাংসার নামে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম মামলা নিষ্পত্তির জন্য “সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা” দাবি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরও অবাক করা বিষয় হলো, তিনি ভুক্তভোগী নারীকে চাপ দিয়ে মামলা থেকে সরে আসতে বলেছেন।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য: “পুলিশই টাকা চাইছে, আমি কিছু চাইনি”
রোববার মুক্তাগাছা থানায় ডাকা হয় ধর্ষণের শিকার নারীকে। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার কথোপকথনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, “আমি কোনো টাকা চাইনি, কিন্তু পুলিশ আমাকে বলল, ‘আপনি এত পাগল হয়ে গেছেন কেন? আসামিদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে মামলা মিটিয়ে ফেলুন।'”
এমনকি তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, “আপনি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলবেন না।” ভুক্তভোগী নারী আরও জানান, পুলিশ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মামলা দায়ের করতে বাধ্য করেছিল।
আসামি পক্ষও অস্বীকার করছে: “টাকা দেব না, শাস্তি হোক”
এদিকে, অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যরাও থানায় ডাকা হয়েছিল। তাদের কাছেও এক লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল মামলা মীমাংসার জন্য। তবে অভিযুক্তের আত্মীয়রা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের বক্তব্য, “আমরা টাকা দেব না। যদি দোষী হয়, তাহলে শাস্তি পাক।”
এসআই রফিকুল ইসলাম এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি নতুন এই থানায় এসেছি। আপনি সরাসরি থানায় এসে কথা বলুন।”
ভুক্তভোগীর আকুতি: “মামলা তুলে নেব, এলাকা ছাড়ব”
ধর্ষণের শিকার নারী এখন মামলা থেকে সরে আসতে চাইছেন। তার ভাষায়, “আমি আদালতে গিয়ে উকিল দিয়ে আপসনামা লিখিয়ে মামলা তুলে নেব। এরপর ঢাকায় চলে যাব, এখানে থাকব না।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমি নিজে থানায় যেতে চাইনি, মামলাও করতে চাইনি। স্থানীয় কিছু লোক আমাকে জোর করে থানায় নিয়ে যায়।”
পুলিশের বক্তব্য: “আপস-মীমাংসার সুযোগ নেই”
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন এই ঘটনায় বলেছেন, “ধর্ষণ মামলায় কোনো ধরনের আপস-মীমাংসা হয় না। যদি কোনো পুলিশ সদস্য টাকা দাবি করে থাকেন, তাহলে তা তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মামলার পটভূমি
১৪ মার্চ এই ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত করা হয় ৬০ বছর বয়সী কবিরাজ আব্দুল খালেককে। মামলা দায়েরের পরই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ জেলে আটক রয়েছেন। তবে অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, “প্রতিপক্ষের চাপে এই নারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে।”
সমাজে প্রশ্ন: পুলিশের ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ?
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমাজে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল মামলায় “টাকার বিনিময়ে মীমাংসা” প্রস্তাব কি ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে? ভুক্তভোগীরা কি পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন?
এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: ওমান থেকে মোবাইলে বিয়ে, দেশে ফিরে দেখলেন স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা | শশুর গ্রেফতার