গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাখায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যে সংস্কার, নির্বাচন এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “ওদের হাতের, ওদের কলমের কোনো সংস্কার আমরা সহজে মেনে নেব না। সংস্কার যদি করেন, আমরা কারেকশন (সংশোধন) করব। বিএনপি সেই কারেকশন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে ঠিক করে তা জাতির কাছে তুলে ধরবে। ওই সমস্ত তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যারা এ দেশের নাগরিক পর্যন্ত নয়, তাদের দিয়ে আপনারা সংস্কার করবেন, এটা আমরা মেনে নেব না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বিশেষ কিছু দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সংস্কার চলছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার, ততটুকু করে নির্বাচন দিন। নির্বাচনের পর যে–ই ক্ষমতায় আসুক, তাকে আমরা সালাম দিয়ে মেনে নেব। কোনো অনির্বাচিত সরকারের, ব্যক্তির কোনো কথা আমরা মেনে নেব না।”
সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা নির্বাচনী সংস্কার করুন। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে।”
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, “কয়েকজন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে দয়া করে অশান্তির দিকে ঠেলে দেবেন না। আমরা শান্তি চাই। এ দেশের মানুষ বহু জেলজুলুম সহ্য করেছে। আমরাও বহু জেল খেটেছি। আর জেল খাটতে চাই না। দেশটাতে বহু বছর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশের মানুষের কষ্টে শান্তি এসেছে। দয়া করে দেশটাকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেবেন না।”
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান সংশয় ও সন্দেহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে বহু কথা শুনেছি, কেউ বলছে নির্বাচন হবে, কেউ বলছে হবে না। আমরা কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, ড. ইউনূস যে কথা বলেছেন তাঁর কথা রাখবেন। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে একটা নির্বাচন পাব। আমরা দেখছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একদল লোক বোকা পেয়েছে, যা খুশি বলে যাচ্ছে, করে যাচ্ছে। ওই লোকগুলো, যারা সংবিধান নতুন করে লিখতে চায়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আপনার ডান পাশে, বাঁ পাশে যারা পরামর্শ দেয়, তারা কারা? তাদের সাথে জনগণের সম্পর্ক কতটুকু? কয়েকজন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে দেশকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেবেন না।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “সমন্বয়কদের একজন বলছে, ৫ আগস্টের আগে বিএনপি এক দফার পক্ষে ছিল না। তারা নাকি বিএনপির মহাসচিবের কাছে গেলে তিনি জানিয়েছেন, এক দফার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। আসলে বিএনপি ১৭ বছর আন্দোলন করেছে। একটাই দাবি ছিল, শেখ হাসিনার পতন, এটা মুখ ফুটে বলার দরকার নেই।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. মিলন হলে আয়োজিত এই ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, সদস্যসচিব তানভীর আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্যে বিএনপির সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর মতে, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ, যা সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সম্ভব।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের আহ্বান