কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক অভাবনীয় ও হৃদয়বিদারক ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে রোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সী এক শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি গত বুধবার (১০ এপ্রিল) ঘটলেও, সন্ধ্যায় শিশুটির পরিবার বিষয়টি বুঝতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির মা একটি স্থানীয় কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বুধবার সকালে তিনি কাজে যান এবং শিশুটির বাবাও প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে ছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তারা দেখেন তাদের কন্যাসন্তানটি অস্বাভাবিকভাবে কাঁদছে। ধীরে ধীরে শিশুটি জানায়, এক কিশোর তাকে চকলেট কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে।
পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে পরিবার তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান শিশুটির প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার করেন, কারণ তার শারীরিক অবস্থা বেশ জটিল ছিল।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর পর ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব-এর নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ শিশুটিকে কয়েকজন সন্দেহভাজনের ছবি দেখায়, যার মধ্যে সে অভিযুক্ত কিশোরকে চিহ্নিত করে। এর ভিত্তিতে পুলিশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত কিশোরকে গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিশু নির্যাতন রোধে সমাজের ভূমিকা
এ ধরনের ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে নাড়া দেয়। শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিশেষ করে কর্মব্যস্ত পিতামাতাদের উচিত তাদের সন্তানদের নিরাপদ পরিবেশে রাখা এবং অপরিচিত ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক থাকা।
শিশুদের সুরক্ষার জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ:
- শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক রাখুন, যাতে তারা কোনো সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারে।
- অপরিচিত কারো কাছে শিশুকে একা রাখবেন না।
- শিশুকে ভালো-খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে সচেতন করুন।
- আশেপাশের সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জানান।
শেষ কথা
এটি শুধু একটি আইনি বিষয় নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো কঠোর হাতে দমন করতে হবে এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আশা করা যায়, দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার ১৩ বছর বয়সী কিশোরীর সন্তান প্রসব: বিচার ও সমঝোতার দ্বন্দ্ব
আপনার কী মতামত? শিশু নির্যাতন রোধে আমরা কীভাবে আরও ভূমিকা রাখতে পারি? কমেন্টে জানান।