ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ—আল্লাহর একত্বে অটল বিশ্বাস। তাওহিদ শব্দটি আরবি “وحد” মূল শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ একক, অনন্য ও অদ্বিতীয়। ইসলামের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা হলো এই বিশ্বাস যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই উপাসনার যোগ্য, তিনি কোনো অংশীদার, সন্তান বা সহচর থেকে পবিত্র।
তাওহিদের তিনটি বিভাগ
তাওহিদকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
তাওহিদ আর-রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্বে একত্ব): আল্লাহ তাআলাই সমস্ত সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা, পালনকর্তা ও পরিচালনাকারী। তিনি ছাড়া আর কেউ জগতের কোনো কিছুর মালিক নন।
তাওহিদ আল-উলুহিয়্যাহ (উপাসনায় একত্ব): ইবাদত, প্রার্থনা, দোয়া, ভরসা, কুরবানি ইত্যাদি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হবে। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে এসব করে, তবে তা শিরক হিসেবে গণ্য হয়।
তাওহিদ আস-সিফাত (গুণাবলীতে একত্ব): আল্লাহর গুণাবলি, নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহের কোনো তুলনা নেই। তিনি যা বলেছেন এবং রাসূল (সা.) যা বর্ণনা করেছেন, আমরা তা নির্ভরযোগ্যভাবে গ্রহণ করি—অতিরঞ্জনা বা বিকৃতি ছাড়াই।
কেন তাওহিদ গুরুত্বপূর্ণ?
তাওহিদ শুধু একটি ধর্মীয় বিশ্বাস নয়; এটি মুসলমানের জীবনের দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমার প্রভু নির্ধারণ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না।” (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ২৩)
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইবাদতের মূল ভিত্তিই হলো একমাত্র আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা। তাওহিদ মানুষকে আত্মমর্যাদাবান করে তোলে। তাওহিদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তি কখনোই অন্য কারো কাছে মাথা নত করে না।
শিরকের ভয়াবহতা
শিরক তাওহিদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে অংশীদার করে। তবে যাকে ইচ্ছা, তিনি অন্য সকল গোনাহ ক্ষমা করেন।” (সূরা নিসা, আয়াত ৪৮)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শিরক একটি মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের সকল আমল ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো নিজের আকিদা বিশুদ্ধ রাখা এবং তাওহিদে দৃঢ় থাকা।
তাওহিদ ভিত্তিক সমাজের প্রয়োজনীয়তা
তাওহিদে বিশ্বাসী সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে মানুষ একে অপরের উপরে জুলুম করে না। একজন তাওহিদপ্রেমী ব্যক্তি সবসময় ন্যায়নীতি ও সত্যকে আঁকড়ে ধরে চলে।
উপসংহার
তাওহিদ ইসলামের প্রাণ। এটি ছাড়া একজন মুসলমানের ইমান পূর্ণ হয় না। প্রতিদিনের জীবন, ইবাদত, আচরণ—সবকিছুতেই তাওহিদের প্রতিফলন থাকা উচিত। আসুন, আমরা সবাই তাওহিদের আলোকে জীবন গড়ি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অগ্রসর হই।