জীবনের ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সটা এক অদ্ভুত সময়। এই সময়টাকে বলা যায় জীবনের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পর্যায়। এ সময়ে মানুষ জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করে। কখনো কখনো এই ভাবনাগুলো এতটাই তীব্র হয় যে, তা মানসিক চাপ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই হতাশা থেকেই মানুষ নতুন করে লড়াই করতে শেখে, টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে। কারণ, এই বয়সে হার মানলেই জীবনের গতি থেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এই সময়ে মানুষ জীবনের অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে শুরু করে। চারপাশের পরিবর্তনগুলো তাকে প্রভাবিত করে। কখনো কখনো এই পরিবর্তন এতটাই দ্রুত ও ব্যাপক হয় যে, মানুষ নিজেকে অসহায় মনে করে। তখন সে শুধু একজন দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যেন সবকিছু ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু তার হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই সময়ে অনেকেই নিজের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে পিছনে ফেলে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়।
এই বয়সে মানুষ নিজেকে অনেক সময় সংকুচিত মনে করে। যেমন, বাবা-মায়ের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা পায়। চাকরি না থাকলে পরিবারের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। প্রিয়জনকে ধরে রাখার মতো সামর্থ্য থাকে না। অনেক স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে অনিচ্ছায় ত্যাগ করতে হয়। এই সময়ে হুট করে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, পছন্দের জিনিস কিনে নেওয়া বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো—এসবই স্বপ্নের মতো মনে হয়। কারণ, এই বয়সে আর্থিক অনিশ্চয়তা, চাকরির চাপ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা মানুষকে আটকে রাখে।
কিন্তু জীবনের এই সংগ্রাম চিরস্থায়ী নয়। ৩৫ বছরের পর যখন আর্থিক স্থিতিশীলতা আসে, তখন অনেক কিছুই হাতের মুঠোয় চলে আসে। টাকা, পরিবার, সম্মান—সবই পাওয়া যায়। কিন্তু তখন আবার সময়ের অভাব দেখা দেয়। সংসার, চাকরি, সামাজিক দায়িত্ব—এসবের চাপে নিজের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই ভুলে যান যে, এক সময় তাদের অনেক স্বপ্ন ও ইচ্ছা ছিল। সময়ের অভাবে সেই স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায়।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মানুষ যখন অবসর পায়, তখন তার হাতে প্রচুর সময় ও সম্পদ থাকে। কিন্তু তখন আর সেই শক্তি বা ইচ্ছা থাকে না, যা তরুণ বয়সে ছিল। তখন মানুষ অনেকটা ঘরকুনো হয়ে যায়, নতুন কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
জীবনের এই চক্রটি খুবই স্বাভাবিক। তরুণ বয়সে টাকার অভাব, মধ্যবয়সে সময়ের অভাব এবং বৃদ্ধ বয়সে শক্তির অভাব—এই তিনটি পর্যায়ে মানুষকে নিজের স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু এই সংগ্রামই জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। তাই এই সময়গুলোকে উপভোগ করতে শেখা এবং প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোই হল আসল জীবনদর্শন।
আরও পড়ুন: অভাব: এক নির্মম বাস্তবতা, যা মানুষকে অদৃশ্য করে দেয়