টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় ৯ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনাটি প্রথমে স্থানীয় সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও, পরবর্তীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে মামলা দায়ের করা হয় এবং দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, প্রায় এক মাস আগে ওই শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, ৪৫ বছর বয়সী ফিরোজ নামের এক অটোরিকশা চালক শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শিশুটির নানির বাড়ির পাশের জমিতে সার দেওয়ার সময় ফিরোজ শিশুটিকে একটি টয়লেটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এবং ঘটনা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
ঘটনার পর শিশুটি চুপচাপ থাকায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাকে পুরো ঘটনা খুলে বলে। এরপর ৮ মার্চ ভুক্তভোগী পরিবার ফিরোজকে প্রধান আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে।
মামলা দায়ের করতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে শিশুটির মা জানান, ঘটনার পর স্থানীয় কিছু মাতব্বর গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করে। সালিশে ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে, জরিমানার টাকা পরিবারটির হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। অসহায় পরিবারটি চাপের মুখে সালিশ মেনে নিতে বাধ্য হয়। পরে তারা মামলা দায়ের করে এবং সালিশে জড়িত মাতব্বরদেরও আসামি করা হয়।
মামলার পর পুলিশ প্রথমে ফিরোজের ছেলে সাব্বির হোসাইন (২১)কে গ্রেপ্তার করে। এরপর শনিবার রাতে প্রধান আসামি ফিরোজকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফিরোজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা শিশু নির্যাতন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমাজের নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার একটি উদাহরণ। সালিশের মাধ্যমে এমন গুরুতর অপরাধ মীমাংসার চেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং মামলাটি ন্যায়বিচারের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় আশা করা যায়, ভুক্তভোগী পরিবারটির ন্যায়বিচার পাবে।
এই ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের সমাজে শিশু সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আরও সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফুটপাতের ভিক্ষুককে ধর্ষণের অভিযোগ, সিএনজি চালক গ্রেপ্তার