সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে নারী—কেউই নিরাপদ নয়। পাবনা, ফেনী, নড়াইল, নেত্রকোনা, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় একের পর এক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে, যা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
পাবনায় ৭ বছরের শিশুর নির্মম হত্যা
পাবনার চাটমোহরে এক মর্মান্তিক ঘটনায় ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। শিশুটিকে নিখোঁজের পরদিন একটি ভুট্টাখেতে তার ঝলসানো মুখ ও বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটি নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ছিল এবং স্থানীয় একটি হেফজখানায় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
ঘটনার বিবরণ
- শিশুটি পহেলা বৈশাখে দাদাবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল।
- নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তার লাশ ভুট্টাখেতে পাওয়া যায়।
- লাশের মুখে পোড়া দাগ এবং গলায় তার নিজের প্যান্ট পেঁচানো ছিল।
- পুলিশ ধারণা করছে, তাকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের নৃশংস ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে হতবাক করে দেয়। প্রশ্ন জাগে, কীভাবে এত নির্মম হতে পারে কোনো মানুষ?
ফেনীতে থাই নাগরিক নারীর ধর্ষণ
ফেনীতে থাইল্যান্ডের এক নাগরিক নারীকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মোখসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
- মোখসুদুরের সাথে ভুক্তভোগীর পরিচয় হংকংয়ে হয়েছিল।
- বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
- গত বছর দুইবার তাকে ধর্ষণ করা হয়।
- সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয়।
এমন ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
নড়াইলে প্রতিবন্ধী তরুণীর ধর্ষণ ও সালিশের চেষ্টা
নড়াইলের লোহাগড়ায় এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে দোকানদার উলফাত মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সালিশের ব্যবস্থা করেছিলেন!
অপরাধীদের রক্ষায় সালিশ
- ধর্ষণের রাতেই স্থানীয় নেতারা উলফাতকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিষয়টি চাপা দিতে চেয়েছিলেন।
- ভুক্তভোগীর পরিবারকে সালিশে ডাকা হয়নি।
- পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, “ইজ্জত তো চলে গেছে, টাকা দিয়ে কী হবে?”
এমন ঘটনা প্রমাণ করে যে, সমাজের কিছু অসাধু ব্যক্তি এখনও ধর্ষণকে একটি “সামাজিক সমস্যা” হিসেবে দেখে, যা আইনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
নেত্রকোনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুদি দোকানদার মোজাম্মেল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
মুন্সীগঞ্জে নারী শ্রমিক ধর্ষণ
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগে বাবু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর সে পালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
সমাধানের পথ কী?
১. দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি: ধর্ষণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
২. সামাজিক সচেতনতা: ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
৩. সালিশ বন্ধ: ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে সালিশের প্রচলন বন্ধ করতে হবে।
৪. নারী ও শিশু সুরক্ষা: পুলিশ ও প্রশাসনকে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
উপসংহার
ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাগুলো শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ নয়, এটি সমগ্র সমাজের জন্য একটি অন্ধকার দিক। আমাদের সবার উচিত এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একসাথে কাজ করা।
আরও পড়ুন: ভোলায় শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনা: ন্যায়বিচার চাই
#নিরাপদ_সমাজ_চাই #ধর্ষণের_বিরুদ্ধে_আইন #StopRape