রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় এক গৃহবধূ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার ভয়াবহ অভিযোগ এনেছেন। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
রবিবার (৬ এপ্রিল) রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এক নারী মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া গ্রামের এক গৃহবধূ। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিমাদ্রি হাওলাদার ও এক সহযোগী আরিফ হোসেন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
মামলার পেছনের ঘটনা
বাদী ও তার স্বামী একটি অপহরণ মামলার আসামি। গত বুধবার (২ এপ্রিল) রাতে পুলিশ স্থানীয় দুই নারীর সহায়তায় বাদীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার স্বামী পালিয়ে যান। পরদিন অপহৃত কলেজছাত্রীকে ফেরত দেওয়া হলে বাদীকে পরিবারের কাছে জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাদীর অভিযোগ, গ্রেফতারের সময় ওসি ও এসআই তার বাড়িতে তল্লাশি চালান এবং স্বামীকে না পেয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া, তাকে মুক্ত করতে গেলে পুলিশ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে বলে তিনি দাবি করেন।
পুলিশের বক্তব্য
পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তার মতে, বাদী একটি অপহরণ মামলার আসামি এবং এই মামলাকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ এক গৃহবধূ তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। বর্তমান মামলার বাদী ওই মামলার ৫ নং আসামি এবং অপহরণকারী তার ভাতিজা। পুলিশের দাবি, তারা আইনানুগভাবে তদন্ত করছেন এবং বাদীর মুক্তিও যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনা
মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়েছে। আদালত তদন্তের জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ফরিদপুর কার্যালয়কে দায়িত্ব দিয়েছেন। পিপি জাহিদ উদ্দিন মোল্লা নিশ্চিত করেছেন যে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাটির তদন্ত চলছে।
জনমনে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, পুলিশের এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য এবং দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করেন, আসল সত্য উদঘাটনের জন্য স্বাধীন তদন্ত জরুরি।
সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপট
নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো সমাজে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ। পুলিশের মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরও বেশি মর্মান্তিক। এটি শুধু ভুক্তভোগীর জীবনই নয়, সমগ্র সমাজের আস্থাকে নষ্ট করে।
এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোরও দাবি উঠেছে।
উপসংহার
এই ঘটনা আমাদের সামনে একটি বড় প্রশ্ন রেখেছে—আইনের রক্ষকরা কি নিজেরাই আইনের ঊর্ধ্বে? ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য। আশা করা যায়, আদালত ও তদন্ত সংস্থা ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেবে এবং ভুক্তভোগী নারীকে ন্যায়বিচার মিলবে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ: অভিযুক্ত গ্রেপ্তার, বাড়িতে ভাঙচুর