বেগুন চাষ এর সঠিক পদ্ধতি ও যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে অনেক চাষি সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে হতাশ হন। বেগুন চাষে সফলতা পেতে সঠিক জাত নির্বাচন, রোগবালাই দমন এবং সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বেগুন চাষের সঠিক পদ্ধতি।
বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়
বেগুন সারা বছর চাষ করা গেলেও শীতকাল এ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উচ্চ তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়, ফলে ফলন কম হয়। তবে বর্তমানে কিছু উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু জাত গ্রীষ্মকালেও ভালো ফলন দেয়।
মাটি প্রস্তুতি
বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য উত্তম। জমি ভালো করে চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত করে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে।
চারা তৈরি
বীজতলায় বেগুনের চারা তৈরি করতে হবে। বীজতলা তৈরির জন্য সহজে পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত, ছায়ামুক্ত স্থান নির্বাচন করুন। গ্রীষ্মকালীন বীজ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, বর্ষাকালীন বীজ এপ্রিল মাসে এবং শীতকালীন বীজ আগস্ট-অক্টোবর মাসে বপন করুন। বীজতলার মাটি গভীরভাবে চাষ দিয়ে উর্বর করে নিন। ৩ বর্গ মিটার বীজতলার জন্য ২৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। বীজতলায় ৫০ মেশ নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে ভাইরাস রোধ করা যায়।
জমি প্রস্তুতি ও চারা রোপণ
বেগুন চাষের জমি সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন স্থান নির্বাচন করুন। জমি ভালো করে ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত করে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করুন। জমিতে বেডের প্রস্থ ৭০ সেমি, দৈর্ঘ্য জমির দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করবে। চারা রোপণের দূরত্ব ১০০ থেকে ৭৫ সেমি এবং নালার প্রস্থ ৩০ সেমি ও গভীরতা ২০ সেমি হতে হবে। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয়, সেজন্য চারা তোলার ১-২ ঘণ্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিন।
সার প্রয়োগ
বেগুন গাছ প্রচুর খাদ্য উপাদান শোষণ করে, তাই ভালো ফলন পেতে সঠিক সার প্রয়োগ জরুরি। চারা লাগানোর আগে জমিতে গোবর বা কম্পোস্ট সার দিলে ভালো হয়। শেষ চাষের সময় গোবর বা কম্পোস্ট এবং টিএসপি সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। সম্পূর্ণ ইউরিয়া এবং অবশিষ্ট এমপি সার ৫টি সমান কিস্তিতে প্রয়োগ করুন: যথাক্রমে চারা লাগানোর ১৫ দিন পর, ফুল আসা শুরু হলে, ফল ধরতে শুরু করলে, এবং ফল আহরণের সময় ২ বার। জমিতে বোরনের অভাব থাকলে বোরাক্স বা বোরিক এসিড ১০ কেজি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন।
সেচ ও পরিচর্যা
জমিকে প্রয়োজনীয় নিড়ানি দিয়ে আগাছামুক্ত রাখুন এবং মাঝে মাঝে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করুন। চারা বোনার ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ দিন এবং পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর সেচ দিন। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হলেও বর্ষাকালে তেমন প্রয়োজন হয় না। বেগুন গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, তাই সেচের পানি বেশি সময় ধরে রাখা যাবে না।
রোগ ও পোকামাকড় দমন
বেগুন ক্ষেতে ঢলে পড়া, গোড়া পচা, মোজাইক, ক্ষুদে পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, পাতার হপার পোকা, কাঁটালে পোকা, সাদা মাছি পোকা ও লাল মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য নিয়মিত মনিটরিং ও সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। রোগ দেখা দিলে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিন। কীটনাশক ব্যবহারের সময় মাত্রা ও নির্দেশিকা মেনে চলুন।
ফসল সংগ্রহ
ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার আগে সংগ্রহ করুন। চারা লাগানোর ২-৩ মাস পর ফসল সংগ্রহের সময় হয়। প্রতি ৫-৭ দিন পরপর ধারালো ছুরি দিয়ে বেগুন সংগ্রহ করুন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জাতভেদে প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ টন ফলন পাওয়া যায়।
শেষ কথা
বেগুন চাষে সঠিক পদ্ধতি ও যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। রোগ ও পোকামাকড় দমন, সঠিক সার প্রয়োগ এবং নিয়মিত পরিচর্যা বেগুন চাষের সফলতার মূল চাবিকাঠি। সঠিক নিয়ম মেনে চাষাবাদ করলে বেগুন চাষ লাভজনক হতে পারে।
আরও পড়ুন: মরিচ চাষ | লাভবান হওয়ার জন্য একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা