সাবেক আইজিপি (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে জমি ক্রয় ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জমি ক্রয় নিয়ে অভিযোগ
বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে, যার অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ছিল। জমির মালিকরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের ভয় দেখিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে এবং নানা কৌশলে জমি বিক্রিতে বাধ্য করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে, জমি কেনার প্রক্রিয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম বেনজীরের পক্ষে জমির মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রিতে বাধ্য করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে ৬২১ বিঘা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫৯৮ বিঘা জমি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় অবস্থিত।
দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বেনজীরের পরিবারের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক নির্মিত হয়েছে।
রিসোর্ট নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা
রিসোর্টটির নির্মাণ ও পরিচালনায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁরা নির্মাণকাজ তদারকি করতেন এবং কৃষিকাজেও নিয়োজিত ছিলেন। রিসোর্টের ভেতরে খামার, নৌকা ভ্রমণ, শিশুদের খেলার জায়গা এবং হেলিপ্যাডসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে।
জমি বিক্রেতাদের অভিজ্ঞতা
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বড়খোলা গ্রামের সরস্বতী রায় বলেন, তাঁরা অনেক কষ্টে সুদ নিয়ে জমি কিনেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হন।
বৈরাগীরটোলা গ্রামের এক জমি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁর তিন বিঘা পৈতৃক সম্পত্তি বেনজীরের পরিবার কিনে নিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা তৈমুর ইসলাম জমির মালিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, আমি ভালো অফিসার (কর্মকর্তা), তাই আপনাদের কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। যদি বিক্রি করতে রাজি না হন, তবে জমিও যাবে, টাকাও পাবেন না।
বাধ্যতামূলক জমি বিক্রি
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, যাঁরা জমি বিক্রি করতে রাজি হননি, তাঁদের আশপাশের জমি কিনে সেখানে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়া হতো, ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করতেন।
মাদারীপুর রাজৈরের কদমবাড়ী ইউনিয়নের বড়খোলা গ্রামের ১২ জন জমি বিক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁরা চাপের মুখে পড়ে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
পরিণতি
অনেক হিন্দু পরিবার তাঁদের পৈতৃক জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
বড়খোলা গ্রামের প্রশান্ত দত্ত বলেন, তাঁরা সচ্ছল ছিলেন, তবু জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
ষাটোর্ধ্ব সরস্বতী রায় জানান, তাঁর স্বামী নিরঞ্জন রায় ২০ বছর আগে জমি কিনেছিলেন, যা বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।
তাঁর ছেলে রঞ্জন রায় এখন দিনমজুরি করে সংসার চালান।
তিনি আরও জানান, বেনজীরের পরিবারের কাছে বিক্রি করা জমির ধান দিয়েই তাঁদের সারা বছর চলত, এখন তাঁদের চাল কিনে খেতে হয়।
সামাজিক প্রভাব ও ন্যায়বিচারের দাবি
এই ধরনের দুর্নীতি ও জোরপূর্বক জমি দখলের ঘটনা সমাজে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই অনিয়মের যথাযথ তদন্ত ও বিচার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: স্ত্রী হিসেবে স্বামীর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাইনা | কতটুকু যৌক্তিক