কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে তার শ্বশুরকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে ভুক্তভোগী গৃহবধূ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে মুঠোফোনের ভিডিও কলের মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামের এক প্রবাসী যুবকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ওই কিশোরী গৃহবধূ শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। মাস দেড়েক আগে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসেন তার স্বামী। সম্প্রতি স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময় স্বামী জানতে পারেন, তার স্ত্রী কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনায় আজ সকালে শ্বশুরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ওই গৃহবধূ।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মেয়েটি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল। তিনি নিজেই বাদী হয়ে শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার পর তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় এক বছর আগে অভিযুক্ত ব্যক্তির ওমান প্রবাসী ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনের মাধ্যমে বাদীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর অনুপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালীন তার প্রতি খারাপ দৃষ্টি পড়ে শ্বশুরের। বিভিন্ন সময় তিনি পুত্রবধূকে প্রসাধনী, খাবার ও মূল্যবান জিনিস উপহার দিতেন। এমনকি সোনার গয়না ও জমি লিখে দেওয়ার প্রলোভনও দেখাতেন। গত বছরের ১৮ আগস্ট শাশুড়ি বাবার বাড়িতে গেলে এ সুযোগে ভোরবেলা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর। ঘটনাটি প্রকাশ করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, তিন মাস আগে দেশে ফিরে আসেন তার প্রবাসী স্বামী। দেড় মাস আগে স্ত্রী শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময় জানা যায়, তিনি কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সর্বশেষ ১৮ মার্চ স্বামীকে নিয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন তারা।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ও সামাজিক কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ দাবি করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
এই ঘটনা বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীর জামালপুরে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার