রমজান মাস পবিত্রতা, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান, তাই আমাদের উচিত সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা।
রমজানে করণীয় বিষয়সমূহ
১. রোজা রাখা: রমজানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রোজা পালন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)
২. কোরআন তিলাওয়াত: এই মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানে জিবরিল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআনের দাওর করতেন। তাই আমাদেরও উচিত প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করা এবং অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ তা বোঝার চেষ্টা করা।
৩. দান-সদকা করা: রমজান দানশীলতার মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে অধিক দান করতেন। এই মাসে গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা, ইফতার করানো ও ফিতরা প্রদান করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব।
৪. তারাবি নামাজ পড়া: রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তারাবি নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস: ১৯০৫)
৫. অধিক পরিমাণে দোয়া ও ইস্তিগফার করা: রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসে বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং দোয়া করা উচিত। বিশেষত ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৬. ইতিকাফ করা: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে ইতিকাফ করতেন এবং উম্মতকে এটি করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
৭. লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা: রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করা উচিত, যা এক রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকা সৌভাগ্যের বিষয়।
রমজানে বর্জনীয় বিষয়সমূহ
১. গিবত ও মিথ্যা কথা বলা: রমজানে মিথ্যা, পরনিন্দা ও গিবত থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও মন্দ কাজ ত্যাগ করে না, আল্লাহর কাছে তার না খেয়ে থাকা ও পানাহার বর্জনের কোনো মূল্য নেই।” (বুখারি, হাদিস: ১৯০৩)
২. অশ্লীলতা ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা: রমজানে সব ধরনের অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ঝগড়া-বিবাদ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রোজার প্রকৃত শিক্ষাই হলো আত্মসংযম।
৩. সময় অপচয় করা: রমজান আত্মশুদ্ধির মাস, তাই টিভি, মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও অন্যান্য ইবাদতে সময় ব্যয় করা উচিত।
৪. অতিরিক্ত খাওয়া ও অপচয় করা: ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা জরুরি। অপচয় ইসলাম সমর্থন করে না, বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই উত্তম।
৫. লোক-দেখানো ইবাদত করা: ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত, লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা শিরকের একটি ক্ষুদ্র রূপ।
রমজান আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও কল্যাণ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। তাই এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আমল করা উচিত এবং সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই পবিত্র মাসের ফজিলত অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন: ইসলাম থেকে মানুষ যেভাবে দূরে সরে যাচ্ছে