একদিন জালালউদ্দিন রুমি একটি গভীর বনের মধ্য দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি বড়, কালো তিতির পাখি ধরে ফেললেন। রুমি তখন ভাবতে লাগলেন—পাখিটিকে কীভাবে খাবেন? আগুনে ঝলসিয়ে নাকি সুস্বাদু তরকারি রান্না করে!
ঠিক তখনই পাখিটি কথা বলে উঠল, “রুমি, তুমি এতদিন জীবনে কত গোশত খেয়েছো, তবুও তোমার আকাঙ্ক্ষা ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও সন্তুষ্টিতে ভরে দেবে।”
রুমি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “আচ্ছা, প্রথম পরামর্শটা দাও, যদি পছন্দ না হয়, তাহলে তোমাকে হত্যা করব।”
পাখিটি বলল, “সবসময় অন্যের উদ্ভট আলোচনা ও মতামতে বিচলিত হয়ো না। বরং তাদের নিজেদের মতো থাকতে দাও, এতে তোমার জীবন আরও সুন্দর হবে।”
রুমি কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলেন যে পাখিটির কথায় সত্যিই গভীরতা আছে। তাই তিনি দ্বিতীয় পরামর্শের জন্য বললেন।
পাখিটি বলল, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি ওই গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শটি দেবো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি একটি গাছের ডালে বসে বলল, “অতীতকে কখনো পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকো। কিন্তু, হায়! তুমি কী বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা আছে। যদি আমাকে হত্যা করতে, তবে এত সম্পদ তোমার হতে পারত!”
রুমি হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি রাগান্বিত হয়ে পাখিটিকে আবার ধরতে ছুটলেন। তখন পাখিটি উচ্চস্বরে বলল, “রুমি, তুমি তো আমার পরামর্শগুলো একদমই শোনোনি! আমি বলেছিলাম, অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না। তাছাড়া, আমি যেখানে দুই কেজির বেশি নই, সেখানে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে কীভাবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন এবং অনুতপ্ত হলেন। তিনি তখন তৃতীয় পরামর্শের জন্য অনুরোধ করলেন।
পাখিটি তখন বলল, “সাবধান, রুমি! সবাইকে উপদেশ দিতে যেও না। উপদেশ কেবল তাদের দাও, যারা তা গ্রহণ করবে এবং তা অনুসরণ করার মানসিকতা রাখে। মনে রেখো, কিছু জিনিস এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।”
রুমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন, প্রকৃত শিক্ষা শুধুমাত্র শোনা নয়, বরং তা উপলব্ধি করা এবং জীবনে প্রয়োগ করাই হলো আসল জ্ঞান।
আরও পড়ুন: সব মানুষ কেন সফল হতে পারে না