সব মানুষ সফল হতে পারে না। এই কথাটা ধ্রুব সত্য। আমরা আমাদের চারপাশে তাকালেই এমন অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ দেখতে পারবো। কেন সব মানুষ সফল হতে পারে না তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারন নিয়ে আজ আলোচনা করবো। আশা করি, আলোচনাটি ফলপ্রসু হবে।
আমরা সবাই সফল হতে চাই। আর এই চাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি কাজ করে তা হলো হিংসা। আমরা যখন আমাদের চারপাশে কাউকে সফল হতে দেখি তখন আমরাও সেই কাজটা করার মাধ্যমে সফল হতে চাই। সেই কাজ করার কতটুকু সক্ষমতা আছে কিংবা আমরা মন থেকে সেটা করতে চাই কিনা তা নিয়ে তেমন ভাবি না।
আর তাই অগোছালো মন নিয়ে যখন ঐ কাজটা করা শুরু করি তখন একটা সময় গিয়ে আমাদের মন আর আর টানে না। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কারন, আমাদের উদ্দেশ্য তো সফল হওয়া (মানে টাকা কামানো বা অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হওয়া)। কাজের প্রতি আমাদের খুব কমই মনোযোগ থাকে।
আর যিনি সফল হয়েছেন (আমাদের চোখে দেখা) তিনি কিভাবে কাজগুলো করেছেন, কতটুকু স্যাক্রিফাইস করেছেন, কতটা সময় দিয়েছেন, কতটা সময় নিয়েছেন, কত রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছেন তা কিন্তু আমরা খেয়াল করি না। আমরা শুধু খেয়াল করি তার টাকা’কে। আর এই টাকা’র পেছনে ছুটে চলাটাই আমাদের একসময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দেয়।
আবার দেখুন, যখন আমরা কোন ভালো কাজ শুরু করি তখন হাজারো সমস্যা আমাদের জীবনে এসে বাঁধা দেয়। এ যাবত পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছে কিংবা আপনি যাদের গল্প শুনেছেন তাদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন যে তাদের কেউ কিন্তু কষ্ট ছাড়া বড় হতে পারেনি। তাদের জীবনে আরও বড় বড় বিপদ এসেছে।
সুতরাং জীবনে সফল হতে চাওয়া মানে জীবনে অনেক বড় বড় বিপদ আসবে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। আপনি যদি সফল ব্যক্তির গল্প শোনেন তাহলে অবশ্যই জানবেন যে, উক্ত ব্যক্তির জীবনে অনেক বিপদ এসেছিল। উনি অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন। এমন সব বিপদ এসেছিল যা আপনি-আমি শুনলেই ঘাবড়ে যাবো। সফল হওয়ার রহস্যটা আসলে এখানেই।
সফলতার প্রান্তে পৌছার জন্য যে পথ দিয়ে আমাদের হেঁটে যেতে হবে সেই পথ আসলে খুবই রুক্ষ। আমাদের অতি সতর্কতার সাথে সেই পথ ধরে হেঁটে যেতে হবে। যে বিপদই আসুক না কেন হাঁটা বন্ধ করা যাবে না। সফলতা এমন এক জিনিস যেখানে পৌছাতে পারলে জীবনে পিছুটান বলতে আর কিছু থাকে না। আর তখন নিজেই চলার জন্য অনেক পথ তৈরী করা যায় আর তাই সেই পুরনো রুক্ষ পথে আর হাঁটতে হবে না।
কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্যি কথা হলো, বেশিরভাগ মানুষই সেই রুক্ষ পথ থেকে ফিরে আসে। তাদের জীবনে বড় ধরণের সর্বনাশ হয়ে যাবে ভেবে আর পথ ধরে এগোয় না। সাহস হারিয়ে ফেলে। মন প্রচন্ড দূর্বল হয়ে যায়। ছোট ছোট আঘাতের কারণেই বিচলিত হয়ে পড়ে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত তারা আর সফল হতে পারে না।
আবার, ব্যক্তিজীবনে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত আপনি যদি নিজে নিতে না পারেন তাহলে কখনোই সফলতার স্বাদ পাবেন না। তাই বলে মা-বাবার কথা, পরিবারের কথা শুনবেন না যে ঠিক তা নয়। আপনার চাওয়া-পাওয়ার সাথে তারা যদি একমত হয় এবং কিভাবে কাজটি করলে ভালো হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তাহলে অবশ্যই তা গ্রহণ করবেন। মনে রাখবেন, এখনও পৃথিবীতে ৯৯% মা-বাবা সন্তানের ভালোর জন্য কাজ করেন।
আপনার মন দুই ধরণের। কোন একটি ভালো কাজে আপনার এক মন সায় দেবে, আরেক মন না করবে। এখানে দুই মন-ই প্রায় সমানভাবে কাজ করে। আবার, কোন একটা খারাপ কাজ করতে চাইবেন তখন আপনার খারাপ মনটা আপনাকে এমনভাবে আকঁড়ে ধরবে যে আপনি ঐ কাজটি করতে বাধ্য হবেন। সুতরাং আপনার খারাপ মন থেকে সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকুন। আর যেসব ভালো কাজ মন করতে চায় না সেই সব কাজ ইচ্ছা করেই বেশি বেশি করুন। যেমন- মসজিদে নামাজ পড়া, প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠা, মোবাইল প্রয়োজন ছাড়া না দেখা, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ইত্যাদি।
চলবে…