মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের একটি অজ্ঞাত সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে বা কাকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সের শেষ দিনে ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশের একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে, অথচ সেখানে মাত্র দুজন কর্মী কাজ করেন। এই সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি।”
তার বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ আসলে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে? তিনি আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত, ওই সংস্থার দুই কর্মী খুবই খুশি এবং কিছুদিন পর তারা কোনো বড় ম্যাগাজিনে প্রচার পাবেন।”
যাদের নাম আলোচনায় এসেছে
ট্রাম্পের এই দাবির পর বাংলাদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আলোচনায় এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলাম এবং হাঙ্গার প্রজেক্টের বদিউল আলম মজুমদারের নাম উঠে এসেছে। তবে তারা উভয়েই এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরো জানিয়েছে, তাদের মাধ্যমে এমন কোনো অর্থ বাংলাদেশে আসেনি। একইভাবে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও ইউএসএআইডিও (USAID) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (SPL) প্রকল্প
বিভিন্ন পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি প্রকল্পের নাম ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ (SPL)। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণ রাজনীতিবিদদের গণতন্ত্র ও নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া। বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে ৫০০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৮০০ জন যুবক সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন ৩০,০০০ মানুষ।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে এবং পরে বিস্তারিত জানানো হবে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “ট্রাম্পের দাবি অস্বাভাবিক এবং সম্ভবত ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিলের বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি বলা হয়েছে।”
এদিকে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন পররাষ্ট্র সচিব এম জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে গণতন্ত্র, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থায়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
শেষ কথা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্য সত্য নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এটি যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তা নিশ্চিত। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ হলে পরিস্থিতি পরিষ্কার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভুটানে চালু হলো স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা