ভূমিকা:
তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। গত এক দশকের মধ্যে এত বড় আকারের বিক্ষোভ দেখেনি তুর্কি জনগণ। রাস্তায় নেমে আসা হাজারো মানুষের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ইস্তাম্বুলের সিটি হল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
কেন এত বিক্ষোভ?
গত রোববার ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে তুরস্ক সরকার। তিনি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপির সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁর গ্রেপ্তারকে বিরোধীরা “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিযোগ করছে।
ইমামোগলু গ্রেপ্তারের আগে এক্স (টুইটার) এ পোস্ট করে বলেছিলেন, “আমাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি মাথা নত করব না।”
বিক্ষোভের চিত্র: টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও সংঘর্ষ
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইস্তাম্বুলের সিটি হলের সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। পুলিশ প্রথমে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে, পরে জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা তুরস্কের পতাকা উঁচু করে “নিরাপত্তাহীনতা নয়, গণতন্ত্র চাই” এর মতো শ্লোগান দিচ্ছেন।
ইমামোগলুর স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোগলু বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “এই অন্যায় শুধু আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নয়, এটি সমগ্র তুরস্কের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আঘাত।”
সরকার ও বিরোধীদের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের নিন্দা করে বলেছেন, “সিএইচপি নেতারা দেশের শান্তি ভঙ্গ করছে। তারা জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।”
অন্যদিকে, বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ (ঘুষ, চাঁদাবাজি, অবৈধ তথ্য সংগ্রহ) রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত।
দেশব্যাপী প্রতিক্রিয়া
এএফপির তথ্যমতে, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৫৫টিতেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে ৩০০ এর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
২০১৩ সালের বিক্ষোভের স্মৃতি
২০১৩ সালে গেজি পার্ক বিক্ষোভের পর এত বড় আন্দোলন তুরস্ক দেখেনি। তখন পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছিল। আজ আবারও ইমামোগলুর গ্রেপ্তার তুরস্ককে নতুন করে উত্তেজনার মুখে ফেলেছে।
আদালতের রায় ও ভবিষ্যৎ
ইমামোগলুকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সোচ্চার হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে তুরস্কের রাজনীতিতে এই ঘটনা কী প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
শেষ কথা:
তুরস্কের এই সংকট শুধু একটি রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের ঘটনা নয়, এটি গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের লড়াই। বিশ্বের নজর এখন তুরস্কের দিকে—কোন পথে যাবে দেশটি, সেটা সময়ই বলবে।