সমাজে পিতাকে দেখা হয় অভিভাবক ও রক্ষক হিসেবে। কিন্তু যখন এই বিশ্বাস ভেঙে পড়ে, তখন তা সমাজের মৌলিক কাঠামোকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় এক পিতার নির্মম অপরাধের বিচার হয়ে গেল, যেখানে নিজ কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে আলতাপ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলা শুধু একটি পরিবারকে না, পুরো সমাজকে নাড়া দিয়েছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার এক কিশোরীর বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর স্বামীর বাড়িতে তার অসুস্থতা ধরা পড়ে। চিকিৎসা পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি ২-৩ মাসের গর্ভবতী। বিষয়টি জানাজানি হলে কিশোরী তার মাকে একটি মর্মান্তিক সত্য প্রকাশ করে—২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর, তার নিজের বাবা আলতাপ হোসেন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
মামলার প্রক্রিয়া ও রায়
কিশোরীর মা ২০২৪ সালের ৭ মার্চ আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর চুয়াডাঙ্গা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দ হাবিবুল ইসলাম বুধবার (১৬ এপ্রিল) অভিযুক্ত আলতাপ হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এছাড়াও তাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, যা না দিলে অতিরিক্ত ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
সমাজের জন্য একটি কঠিন বার্তা
এই মামলার রায় শুধু একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি সমাজে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—নারী ও শিশু নির্যাতনের কোনো ক্ষমা নেই। বিশেষ করে যখন পরিবারের সদস্যই হয়ে ওঠে নির্যাতক, তখন আইন কঠোর হাতেই প্রতিবাদ করে।
আইনের কঠোর অবস্থান
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন দিন দিন কঠোর হচ্ছে। এই মামলায় দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে রাষ্ট্র দেখিয়ে দিয়েছে যে, এমন জঘন্য অপরাধের কোনো সহিংসতা বা সমঝোতা থাকবে না।
পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোরীদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে নির্ভয়ে তা জানাতে পারে। পাশাপাশি, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।
শেষ কথা
চুয়াডাঙ্গার এই ঘটনা আমাদের সবার জন্য একটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করেছে। কিন্তু এর বিচারিক সমাধান দেখিয়ে দিয়েছে যে, ন্যায়বিচার শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না এবং সমাজে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
আরও পড়ুন: সোনারগাঁয়ে নবদম্পতির ওপর নির্মম নির্যাতন: স্বামীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি
আপনার মতামত জানান:
আপনি কী মনে করেন এই ধরনের অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত? নারী ও শিশু সুরক্ষায় আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার? কমেন্টে আপনার মূল্যবান মতামত শেয়ার করুন।