মোহরানা: ইসলামে স্ত্রীর মৌলিক অধিকার
ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন, যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বন্ধনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোহর—স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত অর্থ বা সম্পদ, যা ইসলামিক বিধান অনুযায়ী বিবাহের অপরিহার্য শর্ত।
মোহরানা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি স্ত্রীর আইনগত ও নৈতিক অধিকার। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্টচিত্তে প্রদান করো…” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)
মোহরানা পরিশোধ না করলে কী হয়?
মোহরানা পরিশোধ না করা ইসলামে কবিরা গুনাহ। স্বামী যদি বিবাহের সময় মোহর নির্ধারণ করে কিন্তু পরিশোধ না করে, তাহলে এটি স্ত্রীর প্রতি তার ঋণ হিসেবে গণ্য হয়। এই ঋণ স্বামীর মৃত্যু পর্যন্ত তার ওপর বর্তায় এবং পরিশোধ বা স্ত্রীর সন্তুষ্টচিত্তে মাফ না করা পর্যন্ত তা মকুব হয় না।
মোহরানা পরিশোধের সময় কী মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করা হয়?
একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো—“যদি মোহরানা দীর্ঘদিন পর পরিশোধ করা হয়, তাহলে কি মুদ্রাস্ফীতির হার যোগ করতে হবে?”
উত্তর হলো—না। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, মোহরানা একটি নির্ধারিত ঋণ, যা পরিমাণগতভাবে পরিশোধ করতে হয়, মূল্যগতভাবে নয়। অর্থাৎ বিবাহের সময় যে পরিমাণ মোহর ধার্য করা হয়েছে, তা-ই পরিশোধ করতে হবে—মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি এখানে প্রযোজ্য নয়।
উদাহরণ:
- যদি ২০০০ সালে মোহরানা ধার্য করা হয় ২ লক্ষ টাকা,
- এবং তা ২০২৫ সালে পরিশোধ করা হয়,
- তাহলে স্বামীকে ২ লক্ষ টাকাই দিতে হবে, মুদ্রাস্ফীতির হার যোগ করে বাড়াতে হবে না।
ইসলামিক স্কলারদের মতামত
দারুল উলুম দেওবন্দসহ প্রখ্যাত ইসলামিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে স্পষ্ট মত দিয়েছেন:
“মোহরানা তলব করলে বিবাহের সময় প্রচলিত মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। স্বর্ণ-রূপার দাম বাড়লেও মোহরানার পরিমাণ বাড়বে না।” (ফতোয়া নং: ১৬৩৩১৬)
মোহরানা পরিশোধের সঠিক পদ্ধতি
১. অবিলম্বে পরিশোধ করা উত্তম:
- বিবাহের পর যত দ্রুত সম্ভব মোহরানা পরিশোধ করা উচিত।
২. ঋণ হিসেবে গণ্য:
- যদি স্বামী তাৎক্ষণিক পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে তা তার ওপর ঋণ হিসেবে রয়ে যায়।
৩. স্ত্রীর সম্মতি:
- স্ত্রী চাইলে মোহরানা মাফ করতে পারে, কিন্তু কোনো চাপ বা কৌশলে মাফ করালে তা শরিয়তসম্মত নয়।
৪. তালাক বা মৃত্যুর পরও বকেয়া মোহরানা আদায়যোগ্য:
- স্বামী যদি তালাক দেন বা মারা যান, তাহলে তার সম্পদ থেকে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে।
সচরাচর কিছু ভুল ধারণা
- “মোহরানা শুধু কাবিননামায় লেখার জন্য, আদায় করা জরুরি নয়।”
- এটি সম্পূর্ণ ভুল। মোহরানা স্ত্রীর আইনগত অধিকার এবং তা পরিশোধ করা ফরজ।
- “স্ত্রী যদি মাফ করে দিলে আর দিতে হবে না।”
- হ্যাঁ, তবে মাফ করতে হবে স্পষ্ট ও স্বেচ্ছায়, কোনো প্রকার চাপ ছাড়া।
উপসংহার
মোহরানা ইসলামী বিবাহের একটি অপরিহার্য অংশ এবং স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। এটি নিছক প্রথা নয়, বরং স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর সম্মানের প্রতীক। তাই প্রত্যেক মুসলিম স্বামীর উচিত দ্রুততম সময়ে মোহরানা পরিশোধ করা বা স্ত্রীর সন্তুষ্টি অনুযায়ী সমাধান করা।
মোহরানা নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকলে বিশ্বস্ত ইসলামিক স্কলার বা আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে শরিয়তের সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা যায়।
আরও পড়ুন: রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ