দেশে চাকরি নেই—এই কথাটি আজকাল প্রায় সবাই বলছেন। কেউ নাকি চাকরি পাচ্ছেন না! কিন্তু বিডিজবস বা অন্যান্য জব পোর্টালে গেলে দেখা যায়, হাজারো চাকরির বিজ্ঞাপন থাকলেও “কমপ্লিট প্রোফাইল” পাওয়া যায় হাতে গোনা কয়েকটি। ফেসবুকে বেকারত্ব নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, কিন্তু লিঙ্কডইনে প্রোফাইল আপডেট করার সময় কই?
আমরা আসলে কী করছি?
খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, ঘুরাঘুরি—সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট হয়।
কিন্তু সিভি আপডেট করা হয় না।
স্কিল ডেভেলপমেন্টের চেয়ে সেলফি পোস্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা ও ক্যারিয়ার: ভুল পথে হাঁটা
অনেকেই বিবিএ পড়ে মার্কেটিং বা এইচআর নেন, কিন্তু কেন?
ফাইন্যান্স নেওয়া হয় না, কারণ “অংকে দুর্বল”। অথচ ফাইন্যান্স পড়তে সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রয়োজন নেই!
অ্যাকাউন্টিং এড়ানো হয়, কারণ “আর্টস/সায়েন্সের স্টুডেন্ট, কমার্সের বেসিক নাই”। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং শেখার জন্য কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড জরুরি নয়!
আবার কেউ কেউ বলে, “অ্যাকাউন্টিং তো কম্পিউটার করে দেবে!”—এমন ধারণা থাকলে চাকরি মিলবে কীভাবে?
মার্কেটিং পড়ে মার্কেটিং করতে চায় না!
মার্কেটিংয়ের সংজ্ঞা মুখস্থ আছে, কিন্তু কাস্টমার ডিল করতে গেলেই হিমশিম খায়।
এইচআর পড়েও জানেন না রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং, পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট কী। শুধু মনে হয়, “চাকরি দেওয়া-নেওয়ার কাজ!”
চাকরি চাই, কিন্তু জানি না কী করতে হবে!
“ব্যাংকে চাকরি চাই!”—কিন্তু ব্যাংকের কোর ফাংশন (ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট, ট্রেজারি, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট) সম্পর্কে ধারণা নেই।
“মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করব!”—কিন্তু মাল্টিন্যাশনালে ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক কাজ সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই।
গোল্ডেন জিপিএ, কিন্তু স্কিল জিরো!
“আমার জিপিএ ৩.৭৫!”—কিন্তু এই রেজাল্ট কোম্পানির কাজে কীভাবে লাগবে, তা বলতে পারেন না।
স্কিল ডেভেলপমেন্টের চেয়ে একটার পর একটা ডিগ্রি জমা করাই প্রধান লক্ষ্য।
চাকরি না পেয়ে মাস্টার্স, তারপরও চাকরি না পেয়ে আরেকটা মাস্টার্স!—এভাবে সময় নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু দক্ষতা বাড়ছে না।
দেশে যোগ্য লোকের অভাব, কিন্তু চাকরি নেই কেন?
এক শিক্ষক একজন শিল্পপতিকে বলেছিলেন, “ভারতীয়দের চাকরি দেবেন না, আমাদের দেশের ছেলেদের দিন!”
জবাব পেয়েছিলেন—
“একজন স্কিল্ড বাংলাদেশি দেখান, এখনই চাকরি দিচ্ছি!”
দুঃখের বিষয়, সেই শিক্ষককে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল।
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কী?
শিক্ষা পাওয়ার মানে হলো—
✅ চোখের পর্দা সরিয়ে সঠিক পথ দেখানো
✅ অহংকার ঝেড়ে ফেলে বাস্তবতা বুঝতে শেখা
✅ কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল—তা বিশ্লেষণ করা
কিন্তু আজকাল—
❌ এমবিএ করেই কেউ রিকশা গ্যারেজ চালাতে লজ্জা পায়
❌ অনার্স পাস করে বাবার ছোট্ট খামারটাকে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা করে না
CEO হওয়ার নেশা, কিন্তু ব্যবসার বেসিক জানা নেই!
১,০০০ টাকায় ডোমেইন, ৫০০ টাকায় হোস্টিং, ৩০০ টাকায় বিজনেস কার্ড—ব্যস, হয়ে গেলেন CEO!
কোম্পানিতে কর্মী কয়জন?—”৩ জন!”
কিন্তু CEO হওয়ার যোগ্যতা কী?—উত্তর নেই!
বিজনেস প্ল্যান, মার্কেট রিসার্চ, ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট—এসবের কোনো ধারণা নেই।
২ মাস পর:
“আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি আছে, কিকস্টার্টার আছে, আমাদের দেশে কিছুই নেই!”
অথচ আকিজ গ্রুপ, স্কয়ার, বসুন্ধরা—এরা কীভাবে বড় হলো?
উপসংহার: আসল সমস্যা কোথায়?
“চাকরি নেই”—এই কথার পেছনে লুকিয়ে আছে অদক্ষতা, অলসতা ও ভুল ক্যারিয়ার প্ল্যানিং।
স্কিল ডেভেলপ করুন।
প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান অর্জন করুন।
চাকরির বাজারের চাহিদা বুঝে নিজেকে প্রস্তুত করুন।
যোগ্যতা থাকলে চাকরি পাবেনই। নইলে শুধু “চাকরি নেই” বলে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলে কোনো লাভ হবে না!