বরগুনার তালতলীতে এক মর্মান্তিক গণধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয়রা উত্তপ্ত। এক কিশোরীকে প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে রাতভর গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ইব্রাহিম নামের এক যুবক ও তার চার সঙ্গীর বিরুদ্ধে। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, ঘটনার পর থানায় গিয়েও পরিবারটি ন্যায়বিচার পায়নি। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করায় অভিযোগ উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
ঘটনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে তালতলী উপজেলার নিশানাবাড়ি ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী, পাশের বাড়ির রিনা বেগম (ভাবি) ইব্রাহিম নামে এক যুবকের সঙ্গে কিশোরীর বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে রিনা বেগম কিশোরী ও তার মাকে নিজের বাড়িতে ডেকে এনে ইব্রাহিমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে পাঠিয়ে দেন।
ইব্রাহিম কিশোরীকে নিয়ে নকরী খেয়াঘাটে যান, কিন্তু রাতের অন্ধকারে খেয়া না পেয়ে একটি মাছের ঘেরে আশ্রয় নেন। সেখানে ইব্রাহিম ও তার চার বন্ধু মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করে। সকালে তাকে মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পুলিশের গড়িমসি ও বিচারহীনতা
ঘটনার পর পরিবারটি কিশোরীকে খুঁজতে গিয়ে থানায় যায়, কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সকালে আসতে বলে। পরদিন কিশোরী ফিরে এলে আবারও থানায় যাওয়া হয়, কিন্তু ওসি মো. শাহজালাল গণধর্ষণের মামলা নেননি। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ধর্ষণের আলামত সংরক্ষণের কথা বলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
ইউপি সদস্য শাকিল খানও এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, তালতলী থানার ওসি দাবি করেন, কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ বারবার মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সমাজে নারী নিরাপত্তার সংকট
এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নিরাপত্তার ভয়াবহ চিত্র ফুটে তোলে। প্রতারণা, জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতা—এসবই প্রশ্ন তুলছে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
কী করা উচিত?
১. দ্রুত মামলা নিশ্চিত করা: পুলিশকে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও তদন্ত শুরু করতে হবে।
২. চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা: ভুক্তভোগীকে দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং প্রদান করা জরুরি।
৩. পুলিশের জবাবদিহিতা: কেন মামলা নেওয়া হয়নি, তা তদন্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
৪. সামাজিক সচেতনতা: নারী ও শিশু নিরাপত্তায় স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
উপসংহার
বরগুনার তালতলীর এ ঘটনা শুধু একটি ধর্ষণের কেস নয়, এটি আমাদের সমাজের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। ভুক্তভোগী পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার লামিয়ার আত্মহত্যা: সমাজের নিষ্ঠুরতার আরেকটি করুণ পরিণতি
#নারীনিরাপত্তা #বিচারচাই #ধর্ষণেরবিচার #তালতলীঘটনা