সমাজে নারীর নিরাপত্তা আজও প্রশ্নের মুখে। প্রতিদিনই ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে, আর তারই করুণ পরিণতি হিসেবে আমরা হারাচ্ছি আরেকটি তরুণ প্রাণ। জুলাই আন্দোলনে শহিদ জসীম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া (১৭) ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো সমাজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
শনিবার রাতে ঢাকার আদাবরের শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের একটি বাসায় লামিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের বর্ণনা অনুযায়ী, লামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং রোববার মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে।
লামিয়ার মা রুমা বেগম ছোট মেয়েকে মাদ্রাসায় রেখে বাড়ি ফিরে দেখেন, বড় মেয়ে লামিয়া আর বেঁচে নেই। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধর্ষণের ঘটনা ও বিচারহীনতার অভিশাপ
গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় লামিয়াকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনায় অভিযুক্তরা তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, যদি সে কোনো অভিযোগ করে, তাহলে তার নগ্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এই ভয় ও লজ্জায় লামিয়া দীর্ঘদিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন।
অপরাধীরা প্রথমে গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিন পেয়ে যায়। এই বিচারহীনতাই লামিয়াকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিয়েছে। তার মামা সাইফুল ইসলামের কথায়, “জুলাই আন্দোলনে আমার বোন স্বামীহারা হলো, এখন মেয়েকে হারালো। ধর্ষকেরা জামিন পেয়ে বেড়াচ্ছে, আমরা কার কাছে ন্যায় চাইব?”
সমাজের ভূমিকা: নীরবতা ও উদাসীনতা
লামিয়ার আত্মহত্যা শুধু একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজের ব্যর্থতারই প্রতিচ্ছবি। ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি সমাজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়—এসবই লামিয়ার মতো অসংখ্য নারীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রতিবেশী জামিলা খাতুনের মতে, “লামিয়াকে হয়তো ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাই সে আত্মহত্যা করল। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের দায় কার?” প্রশ্নটা সবার।
আমাদের করণীয়
১. দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা: ধর্ষণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
২. মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং ও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।
৩. সামাজিক সচেতনতা: নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।
৪. অপরাধীদের কঠোর শাস্তি: ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার
লামিয়ার আত্মহত্যা আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকটিকে আবারও উন্মোচন করেছে। শুধু আইন নয়, আমাদের মানসিকতাও বদলাতে হবে। নারীরা যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে, তাদের প্রতি যেন কোনো অপরাধীর সাহস না হয়—সেই সমাজ গঠনই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লামিয়ার মৃত্যু যেন বৃথা না যায়, সে জন্য আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: শিশু জান্নাতির মুখে মাটি ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়
#JusticeForLamia #StopRape #NoMoreSilence
মন্তব্য করুন: লামিয়ার মতো ঘটনা রোধে আপনার কী মতামত? নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি? নিচে কমেন্টে শেয়ার করুন।