চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় এক অভাবনীয় ও নির্মম অপরাধে স্তম্ভিত করেছে সমাজ। নিজেরই কন্যাসন্তানকে একাধিকবার ধর্ষণ করে গর্ভবতী করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক নরপিশাচ বাবাকে। এই ঘটনায় এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
২৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সকালে সাতকানিয়া থানা পুলিশ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ছদাহা ইউনিয়নের মনোহর চৌধুরীপাড়া থেকে মোহাম্মদ আলী (৪০) নামের ওই ধর্ষক বাবাকে গ্রেপ্তার করে। ধৃত ব্যক্তি এলাকার মৃত এমদাদ আলীর ছেলে।
কীভাবে ধরা পড়লো এই নরপিশাচ?
ঘটনাটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে। পরে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। মেয়েটির মা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, তার স্বামী তাদেরই বড় মেয়েকে (১২/১৩ বছর) ধর্ষণ করেছে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েটির করুন অবস্থা
ধর্ষণের শিকার মেয়েটি স্থানীয় কেফায়েত উল্লাহ-কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে তার পেটে ব্যথা ও বমি হচ্ছিল। ২২ এপ্রিল মেয়েটিকে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা শনাক্ত করেন যে সে আড়াই মাসের গর্ভবতী। পরে গর্ভপাত করানো হয়।
ধর্ষণের ভয়াবহ বিবরণ
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১২টার দিকে মেয়েটি প্রথমবারের মতো তার বাবার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। এরপর একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করা হয়। ভয়ে মেয়েটি এই বিষয়টি কাউকে বলতে পারেনি। বাবা তাকে ও তার মাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
মেয়েটির মা জানান, যখন তিনি স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তখন সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখতে বলে। পরে আত্মীয়স্বজনদের পরামর্শে তিনি থানায় মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় সাতকানিয়ার মানুষ হতবাক। স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, “এমন ঘটনা শুনে আমি লজ্জিত। এ কাজ শুধুমাত্র একজন মানসিকভাবে বিকৃত মানুষই করতে পারে।”
পুলিশ ও আইনগত ব্যবস্থা
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অপরাধ স্বীকার করেছে।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়
১. সন্তানের সাথে খোলামেলা সম্পর্ক রাখুন – সন্তানকে বিশ্বাসের পরিবেশ দিন, যাতে তারা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারে।
২. সচেতনতা বৃদ্ধি – সমাজে যৌন নির্যাতন ও শিশু ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
৩. দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া – কোনো ধর্ষণ বা নির্যাতনের ঘটনা জানামাত্রই পুলিশ ও আইনের সহায়তা নিতে হবে।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রসার – অনেক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা এমন অপরাধ করে থাকে, তাই তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা
এমন নৃশংস ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না, সমাজের মৌলিক ভিত্তিকেও নাড়া দেয়। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থাকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি, সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা তৈরি করে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আর কোনো শিশু এমন পৈশাচিকতার শিকার না হয়।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে চা বাগানের নির্জন টিলায় গৃহবধূর নির্মম ধর্ষণ: গ্রেফতার ১
#ধর্ষণের_বিরুদ্ধে_আইনি_প্রতিরোধ #শিশু_সুরক্ষা #সাতকানিয়া_ঘটনা