ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানালেও, ভারত এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে, যা গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
কাশ্মীর হামলা ও ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা
সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। এছাড়া, দিল্লিতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে, এই আলোচনাগুলো শুধু কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার জন্যও বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম না নিয়ে বলেছেন, “সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করা হবে এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।” এই বক্তব্যকে অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন।
সীমান্তে উত্তেজনা ও অভিযান
ইতিমধ্যে দুই দেশের সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা বেড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েক রাত ধরে সীমান্তে ছোট অস্ত্রের গোলাগুলি চলছে। অন্যদিকে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে। শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে, এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
পাকিস্তানের পাল্টা পদক্ষেপ
ভারতের ঘোষণার পর পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করেছে। এছাড়া, ভারতের দিকে বয়ে যাওয়া নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছে দিল্লি। পাকিস্তানি দূতাবাসের কিছু কর্মী ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হামলার পেছনে কে?
হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানও এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে, ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করছেন, প্রাথমিক তদন্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগের কিছু প্রমাণ মিলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমি ভারত ও পাকিস্তান উভয়েরই বন্ধু, কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।” তবে, যুক্তরাষ্ট্র কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ভারত-পাকিস্তান: পরমাণু শক্তিধর দেশের সংঘাতের ঝুঁকি
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাই, সামরিক সংঘাত বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালিয়েছিল, এবং পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিয়েছিল। এবারও অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সামরিক সংঘাত কি আসন্ন?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এবার বড় ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। পাকিস্তানও ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তারা ভারতের যেকোনো আক্রমণের জবাবে আরও শক্তিশালী পাল্টা আঘাত হানবে।
উপসংহার
বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে বারবার ধর্ষণ, কিশোরীর আত্মহত্যা
আপনার মতামত জানান: এই উত্তেজনার পরিণতি কী হতে পারে? নিচে কমেন্টে আপনার ভাবনা শেয়ার করুন।