সম্প্রতি ইপিজেড থানা এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি চার বছরের নিরীহ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা শুনলে শুধু মনের ভিতরই ক্ষোভ জন্মায় না, প্রশ্ন জাগে—আমরা কতটা নিরাপদ? শিশুদের জন্য কি এই সমাজে কোনো সুরক্ষা নেই? আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা ঘটনাটির বিস্তারিত, আইনি প্রক্রিয়া এবং শিশু সুরক্ষায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
ঘটনার বিস্তারিত
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইপিজেড থানার কলশী দিঘীর পাড় রেলবিট জোড়া খাম্বা আলাউদ্দিন কলোনিতে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত মোঃ রবিউল (৩৫) ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও অস্থায়ীভাবে এই কলোনিতে বসবাস করছিলেন।
কীভাবে ঘটল এই ঘটনা?
- রবিউল সেদিন সন্ধ্যায় দুটি শিশুকে (৪ ও ১০ বছর বয়সী) নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে একজনকে টাকা দিয়ে সিগারেট কিনতে পাঠান।
- এরপর তিনি ৪ বছরের শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে শিশুটি চিৎকার করে ওঠে।
- প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে দৌঁড়ে এলে রবিউল শিশুটিকে ছেড়ে দেন।
- পরে শিশুটির মা ও এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন।
- ৯৯৯ কলের মাধ্যমে ইপিজেড থানা পুলিশ, নৌ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়।
আইনি ব্যবস্থা ও পুলিশের ভূমিকা
ইপিজেড থানার ওসি মোঃ আখতারুজজামান ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী শিশুটিকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং মামলার নথিভুক্তিকরণ ও আলামত সংগ্রহ চলছে।
বাংলাদেশের আইনে শিশু ধর্ষণের শাস্তি
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, যার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর:
- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
- পক্সো অ্যাক্ট (POCSO Act) এর মতো কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমছে না।
শিশু সুরক্ষায় আমাদের করণীয়
এমন ঘটনাগুলো শুধু আইনের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব নয়, সমাজের সচেতনতাও জরুরি।
১. সন্তানকে সচেতন করুন
- শিশুদের “গুড টাচ-ব্যাড টাচ” সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
- তাদের বলুন, কেউ অপ্রীতিকর আচরণ করলে যেন অবশ্যই পরিবারকে জানায়।
২. নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন
- শিশুদের অপরিচিত কারও সাথে একা যেতে দেবেন না।
- বাড়ির চাকর, ড্রাইভার বা পরিচিতজনদেরও পর্যবেক্ষণে রাখুন।
৩. সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো
- এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিন।
- শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সেমিনার ও ক্যাম্পেইনের আয়োজন করুন।
উপসংহার
এই ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়—এটি আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে এমন ঘটনা রোধ করতে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে প্রতিটি শিশু নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠবে।
আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।
আরও পড়ুন: ভোলায় ঈদের কেনাকাটায় গিয়ে কিশোরী ধর্ষণের শিকার: অভিযুক্ত গ্রেপ্তার